মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:১৭ পূর্বাহ্ন
অনলাইন ডেস্ক: সন্ধ্যা নদী ঘিরে অবস্থান বরিশালের বানারীপাড়া ও উজিরপুর উপজেলার। যে দুই উপজেলা নিয়ে বরিশাল-২ আসনের মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ১ হাজার ৩৯৭ জন। বর্তমানে এ আসনে সংসদ সদস্য হিসেবে জনপ্রতিনিধিত্ব করছেন বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুস।
২০০৮ সালে বিএনপির এস সরফুদ্দিন আহমেদ সান্টুকে প্রায় ১২ হাজার ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের মনিরুল ইসলাম মণি। আর পরের নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্তে এই আসন থেকে মনোনয়ন পান অ্যাডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুস। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য হন তিনি।
তবে এবার আওয়ামী লীগের হয়ে মনোনয়ন চান অনেকে। তাদের মতে এলাকার উন্নয়নে নিজ এলাকার মানুষদেরই জনপ্রতিনিধিত্ব করা উচিত। যে মানুষের দুঃখ-কষ্ট কাছে থেকে জানতে পারবে। তবে গেল ৫ বছরে এই সংসদীয় এলাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থার আমূল উন্নয়নের কারণে জনপ্রিয়তায় অনেকটাই এগিয়ে রয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য।
নির্বাচনী এলাকা ঘুরে জানা গেছে, দুই উপজেলার মধ্যে উজিরপুরের বেশিরভাগই বিল এলাকা। পরিসংখ্যান বলছে, এই আসনে আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থক বেশি। তবে ভোটের শক্তিতে উভয় দলই সমান সমান থাকলেও প্রার্থী নির্বাচনের ওপর জয়-পরাজয়ের বিষয়টি নির্ভর করতে পারে।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এ আসনে কোনো দল কখনই একক আধিপত্য বিস্তার করতে পারেনি। ১৯৯১ সালে এ আসনে সংসদ সদস্য ছিলেন ওয়ার্কার্স পার্টির রাশেদ খান মেনন (বর্তমান সমাজকল্যাণমন্ত্রী)। ১৯৯৬ সালে জেপির প্রার্থী সাবেক ছাত্রনেতা গোলাম ফারুক অভি, আর এর পরেরবার বিএনপির সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল ছিলেন এ আসনের সংসদ সদস্য।
এরপর সংসদীয় আসন পুনর্গঠনের পর ২০০৮ সালে বিএনপির এস সরফুদ্দিন সান্টুকে হারিয়ে সংসদ সদস্য হন আওয়ামী লীগের মনিরুল ইসলাম মণি। যদিও দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি আর দল থেকে মনোনয়ন পাননি। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য হন অ্যাডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুস। যদিও তিনি এর আগে বরিশাল-১ (গৌরনদী- আগৈলঝাড়া) আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন। আর তার বাড়িও গৌরনদীতে।
তবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসন (জাতীয় সংসদের ১২০ নম্বর নির্বাচনী এলাকা) ঘিরে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিতে মনোনয়ন প্রত্যাশী রয়েছে অনেকে। রয়েছে জাতীয় পার্টি, ওয়ার্কার্স পার্টি ও জাসদের মনোনয়ন প্রত্যাশী প্রার্থীও।
আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মো. ইউনুস, সাবেক সংসদ সদস্য মনিরুল ইসলাম মণি, সাবেক ছাত্রনেতা শাহে আলম, শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের দৌহিত্র ফাইয়াজুল হক রাজু, বানারীপাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম ফারুক, বর্তমান মেয়র সুভাষ চন্দ্র শীল, ব্যবসায়ী ক্যাপ্টেন অব. এম মোয়াজ্জেম হোসেন।
এছাড়াও নির্বাচনের আগে নিজ এলাকায় জনগণের সঙ্গে বেশ সম্পৃক্ত হয়ে গণসংযোগ চালিয়েছেন এমন নেতাও কম নয়। মনোনয়ন প্রত্যাশীর তালিকায় রয়েছেন আওয়ামী লীগের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা হাবিবুর রহমান খান, ছাত্রলীগ নেত্রী রুবিনা আক্তার, ইঞ্জিনিয়ার আব্দুর রাজ্জাক ও সুজন হালদার।
মনোয়ননের বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের তালুকদার মো. ইউনুস বলেন, সরকারের সুশাসন, ধারবাহিক উন্নয়নসহ নানা ইতিবাচক কারণে জনগণ নৌকার বিজয় নিশ্চিত করবে। নির্বাচনে একাধিক সম্ভাব্য প্রার্থী থাকতে পারে, তবে দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যাকে মনোনয়ন দেবেন, সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে তার পক্ষে কাজ করবেন।
অপরদিকে সাবেক সংসদ সদস্য মনিরুল ইসলাম মণি বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনবার নির্বাচিত হয়েছি। আশির দশক থেকেই সাধারণ মানুষের সেবায় নিয়োজিত রয়েছি। আসনের নেতাকর্মী থেকে শুরু করে জনগণ কী চায় তা আমি বুঝি।
এদিকে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীর তালিকায় শীর্ষে রয়েছেন ২০০৮ সালের নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী এস সরফুদ্দিন আহমেদ সান্টু। তার পাশাপাশি মনোনয়ন প্রত্যাশীর তালিকায় রয়েছেন সাবেক হুইপ সৈয়দ শহীদুল হক জামাল, কর্নেল (অব.) সৈয়দ আনোয়ারুল হক, সাংবাদিক নেতা ইলিয়াস খান,সাবেক ছাত্রনেতা রওনকুল আলম টিপু ও মো. দুলাল হোসেন।
বানারীপাড়া উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রিয়াজ মৃধা বলেন, ২০০৮ সালের প্রেক্ষাপটের থেকে এ নির্বাচনের প্রেক্ষাপট আলাদা। তাই ভোটের সময় নেতাকর্মীরা সবাই ধানের শীষের দিকেই তাকাবে। তখন আর প্রার্থীর বিষয়টি মুখ্য থাকবে না।
তবে সাবেক সংসদ সদস্য ও হুইপ শহীদুল হক জামাল অনেকটা অনানুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনের ঘোষণা দিলেও তিনি ঠিক কোন দল থেকে মনোনয়ন চাইবেন, সেটি নিশ্চিত নয়। তার মতে প্রার্থিতা নিয়ে থাকছে চমক।
এছাড়াও এ আসনে ১৪ দলীয় জোটের শরিক জাসদের (আম্বিয়া-প্রধান) কেন্দ্রীয় নেতা উজিরপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বাদলও মনোনয়ন প্রত্যাশী। জোটের মনোনয়ন না পেলেও দলের ব্যানারে প্রার্থী হতে পারেন তিনি।
এছাড়া জাসদ (ইনু) কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-দফতর সম্পাদক মো. সাজ্জাদ হোসেন, ওয়ার্কার্স পার্টির ছাত্র সংগঠন ছাত্রমৈত্রী কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সভাপতি রফিকুল ইসলাম সুজনও এই আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী রয়েছেন। তবে তারা দলের সিদ্ধান্তেই চূড়ান্ত হিসেবে দেখছেন।
এ বিষয়ে ছাত্রমৈত্রীর কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সভাপতি রফিকুল ইসলাম সুজন জানান, ১৪ দল জোটবদ্ধ নির্বাচন না করলে বরিশাল-২ আসন থেকে ওয়ার্কার্স পার্টিও প্রার্থী দেবে। আর দলের সিদ্ধান্তেই তিনি কাজ করবেন।
এদিকে জাতীয় পার্টির (এরশাদ) সম্ভাব্য প্রার্থী দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য চিত্রনায়ক মাসুদ পারভেজ সোহেল রানা এবং বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের প্রার্থী মো. নাসির উদ্দিন। রয়েছে ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনেরও প্রার্থী মাওলানা মুহাম্মদ নেছার উদ্দিন।
Leave a Reply